মানব সভ্যতার বিকাশে দর্শন ও বিজ্ঞানের ভূমিকা বরাবরই আলোচিত বিষয়। দর্শন মানুষকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে, আর বিজ্ঞান সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিয়েছে। তবুও আধুনিক কালে এক বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে—আজকের যুগে দর্শনের আর প্রয়োজন আছে কি না?
২০১১ সালে গুগলের এক কনফারেন্সে বিখ্যাত ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ঘোষণা করেছিলেন, “দর্শন মৃত। জ্ঞানের দিশা দেখাতে সক্ষম একমাত্র মাধ্যম হলো বিজ্ঞান।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি দর্শনের সীমাবদ্ধতা এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির সম্ভাবনা স্পষ্ট করে তুলেছিলেন।

দর্শনের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের মনে প্রশ্ন জাগানো—আমি কে? পৃথিবীর উৎপত্তি কোথায়? মহাবিশ্বের শেষ কোথায়? প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের দার্শনিকরা মানুষকে চিন্তার নতুন দিশা দেখিয়েছেন। কিন্তু দর্শনের সমস্যা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা উত্তর দিতে পারে না; কেবল প্রশ্নের পর প্রশ্ন রেখে যায়।
বিজ্ঞানের উত্থান
অন্যদিকে, বিজ্ঞান শুধু প্রশ্ন করে থেমে থাকে না, বরং পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণের মাধ্যমে উত্তর খোঁজে। উদাহরণস্বরূপ, মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে দর্শন হাজার বছর ধরে ভাবনাচিন্তা করেছে, কিন্তু বিজ্ঞানের হাত ধরেই এসেছে বিগ ব্যাং তত্ত্বের ব্যাখ্যা।
স্টিফেন হকিং নিজেই ছিলেন এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের অগ্রগামী। শারীরিকভাবে প্রায় অচল হয়ে পড়লেও তাঁর চিন্তার শক্তি থামানো যায়নি। ১৯৮৫ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ট্রেকিওস্টমি অস্ত্রোপচারের কারণে তিনি বাকশক্তি হারান। তবুও প্রযুক্তিনির্ভর কম্পিউটারভিত্তিক ভয়েস সিস্টেমের সাহায্যে তিনি নিজের চিন্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।
হকিং ও বিজ্ঞানের জয়
তাঁর রচিত “কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” (A Brief History of Time) কেবল একটি বই নয়, বরং বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার এক অসাধারণ প্রচেষ্টা। বইটি একটানা ২৩৭ সপ্তাহ ধরে The Sunday Times–এর সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় টিকে ছিল। এখানে তিনি মহাবিশ্বের গঠন, কৃষ্ণগহ্বর, সময়ের প্রবাহ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে জটিল বৈজ্ঞানিক আলোচনা সহজ ভাষায় তুলে ধরেছিলেন।
দর্শন বনাম বিজ্ঞান: শেষ কথন
স্টিফেন হকিং-এর মতে, দর্শন আমাদেরকে অতীতের আলোচনায় আবদ্ধ রাখে। দর্শন প্রশ্ন তোলে—কেন আমরা এখানে? কিন্তু বিজ্ঞান বলে—আমরা এখানে কীভাবে এলাম। দর্শন হয়তো দিক নির্দেশনা দেয়, কিন্তু বিজ্ঞান দেয় বাস্তবতার ভিত্তি।
তথ্যসূত্র
অমর্ত্য সেন – যুক্তিবাদী চিন্তা ও বিজ্ঞানচর্চা
সত্যেন্দ্রনাথ বসু – বিজ্ঞান ও দর্শন
মেঘনাদ সাহা – বিজ্ঞান দর্শন ও সমাজ
প্রশান্ত চক্রবর্তী – আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানচিন্তা
গৌতম বসু – বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা
স্টিফেন হকিং – কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (বাংলা অনুবাদ)
অরুণকান্তি দাস – বিজ্ঞান, দর্শন ও প্রযুক্তি
দেবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় – লোকায়তন: প্রাচীন ভারতের এক প্রগতিশীল দর্শন
সন্দীপন ভট্টাচার্য – বিজ্ঞান ও সমাজচিন্তা
সম্পাদনা, সাংবাদিকতা, এবং সৃজনশীল লেখায় প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা নিয়ে অদিতি এক উদীয়মান সাহিত্যিক কণ্ঠ। বাংলা সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং সুগভীর প্রতিভার অধিকারী এক তরুণ লেখিকা। বাংলা সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে, নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকা, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল এবং সংকলনে তার লেখা প্রকাশ হয়েছে। তার লেখা একক বই এবং সম্পাদিত সংকলন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে, তার “মৃত্যু মিছিল” বইটি পাঠকমহলে বেশ জনপ্রিয়। তার সৃষ্টিশীলতার প্রসার ঘটেছে আকাশবাণী এবং ফ্রেন্ডস এফএম-এ, যেখানে তার লেখা সম্প্রচারিত হয়েছে। অদিতির মতে, "বইয়ের থেকে পরম বন্ধু আর কেউ হয় না," এবং এই বিশ্বাস তাকে সাহিত্য জগতে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বর্তমানে তিনি “বিশ্ব বাংলা হাব” -এ লেখক পদে কর্মরত।